বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৫ অপরাহ্ন
সাদের হোসেন (বুলু), দোহার-নবাবগঞ্জ থেকে:: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষে সারা দেশের ন্যায় রাজধানীর পাশে অবস্থিত ঢাকা-১ আসন দোহার-নবাবগঞ্জে এবার শুরুতেই জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। ৫ লাখের অধিক ভোটার অধ্যুসিত এই আসনেরর উপর সমগ্র দেশবাসী ও সকল গনমাধ্যমের দৃষ্টি রয়েছে। কারন দেশ বরেণ্য দুই শিল্পগোষ্ঠির দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী দুই দলের হয়ে লড়ছেন এই আসনটিতে।
বহুল আলোচিত এই আসনটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্নধার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিযোগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দিনব্যাপী নিজেদের পক্ষে লিফলেট বিতরণসহ ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। এছাড়া উপজেলা দুটির বিভিন্ন ইউনিয়নে ভোটারদের সাথে মতবিনিময় সভা করে নির্বাচনী অঙ্গিকার ও বিগত সময়ে হওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। এছাড়া বিভিন্ন উঠান বৈঠকে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীগন আগামী দিনের নির্বাচনী অঙ্গিকার বাস্তবায়নের সার্বিক কর্মপরিকল্পনা ভোটারদের মধ্যে তুলে ধরছেন।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিযোগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান তার নির্বাচনী প্রচারণায় ও নির্বাচনী লিফলেটে ভোটারদের জানিয়েছেন, দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরনের পথে, এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হবে। নবাবগঞ্জে নার্সিং কলেজও বাস্তবায়নের পথে। দুর্যোগ মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। গ্যাস সংযোগ প্রকল্প স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে এ বিষয়টি বান্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এছাড়া জনসংযোগকালে বলেছেন, বিগত সময়ে আমি আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে এই অঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করেছি। আমি আপনাদের ভোটে আবারও নির্বাচিত হলে আপনাদের দাবি মোতাবেক সকল উন্নয়ন কাজ পর্যায়ক্রমে সমাপ্ত করবো ইনশাল্লাহ। এসময় তিনি আরো বলেন, তিনি পুনরায় নির্বাচিত হলে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় একাধিক মিনি স্টেডিয়াম স্থাপন করাসহ মাদক, সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করবেন এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী এই দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলাকে একটি দারিদ্র্রমুৃক্ত আধুনিক অঞ্চল হিসেবে গড়তে তুলবেন।বিেেশষ কওে দোহার নবাবগঞ্জে নদী ভাঙ্গন মোকাবেলা, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, মৈনট ঘাটকে পরিপূর্ণভাবে পর্যটন বান্ধব এলাকায় রুপান্তর করা হবে। ইছামতি নদীর নাবত্যা বাড়ানোসহ কালীগঙ্গা নদীতে বাধঁ নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে এসব উন্নয়ন কাজ গ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
অপরদিকে, ঢাকা-১ আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম তার নির্বাচনী লিফলেটে ভোটারদেও জানিয়েছেন তিনি নির্বাচিত হলে দোহার নবাবগঞ্জকে রাক্ষুসী পদ্মার করাল গ্রাস হতে রক্ষা করতে চলমান কাজের অসমাপ্ত অংশ বাঁধ মেরামতের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। পদ্মার পাড় জুড়ে ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হবে। দোহার নবাবগঞ্জের ৫ লক্ষাধিক ভোটারের গণদাবী বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের বিষয়ে সরকারীভাবে বাস্তবায়ন,প্রয়োজনে ভুর্তকির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইছামতি নদীকে সচল করতে দুইপাড়ে ওয়ার্কওয়ে তৈরীকরাহবে। যাতে সাধারণ মানুষ প্রাকৃতিক ও মনোরম পরিবেশে জীবনযাপন করতে পারে। দুষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা হবে। নবাবগঞ্জকে পৌরসভায় রূপান্তরিত করে আধুনিক জীবনব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নাগরিক জীবনের সকল সমস্যা নিরসনে পাকা রাস্তার দু’পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু করা হবে। দোহার নবাবগঞ্জের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক ও স্মার্র্ট মানের গড়ে তোলে ফলাফলের মান উন্নয়নে জবাবদিহিতা ও তদারকি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে কারিগরিি শক্ষার উপর জোর দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মমূখী করে গড়ে তোলার সার্বিক উদ্যোগ নেয়া হবে। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। যাতে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। নির্বাচিত হলে দোহার নবাবগঞ্জের ৪১৫টি গ্রামের মাটির তৈরী রাস্তা পাকা করা হবে। পাকা রাস্তাগুলো সংস্কারের মাধ্যমে প্রশস্ত এবং ড্রেনেজ লাইনের মাধ্যমে আধুনিক নগরের আদলে গ্রামকে উন্নত করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া হবে। আলোাকিত দোহার নবাবগঞ্জ গড়তে সড়কগুলোর মোড়ে আলোকবাতির ব্যবস্থা করা হবে। দারিদ্র্য জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলো সচল করা ও তাদেও কার্যক্রম তদারিক করতে স্থানীয় সচেতন শিক্ষিত ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি কর্তৃক কমিটি গঠন করা হবে। যাতে গ্রামের সাধারণ গরীব মানুষের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যায়। দোহারের পদ্মার মোহনা পুরুলিয়া হতে প্রবাহিত খালকে খননের মাধ্যমে দ্ইু পার শাসন করে নবাবগঞ্জের ইছামতিনদীর সাথে সংযোগ ঘটিয়ে সারা বছর পানি প্রবাহ চলমান থাকে সেই ব্যবস্থা করা হবে। নদীর পাশ্ববর্তী গ্রাম ও কৃষিজমি জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণকরা হবে। ফলে এসব খালের পানি দিয়ে কৃষকরা সেচ প্রকল্প চালু রাখতে পারে। মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় দোহার নবাবগঞ্জের ২২টি ইউনিয়ন ও দোহার পৌরসভায় অবহেলিত গ্রাম গুলোতে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের কার্যকরি উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রতিটা ইউনিয়নে সেলাই কেন্দ্র চালুকরে নারীদের কর্মমুখী করে গড়ে তোলার জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সহায়তা অব্যাহত থাকবে। নতুন ভোটার বা শিক্ষিত ও মেধাবী তরুণ তরুনীদের জন্য সরকারী বেসরকারী চাকুরীতে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরী করা হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদেরকে বিভিন্ন ব্যক্তি, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা গড়তে স্থানীয় প্রশাসন, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করার মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। সামাজিক অবক্ষয় রোধে সচেতন নাগরিক কমিটি গড়ে উঠতি যুব সমাজকে খেলাধুলায় মনোনিবেশ করে সামজিক ভারসাম্য রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হবে। নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ ও নারীর ক্ষমতায়নে সর্বক্ষেত্রে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টিতে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দোহার-নবাবগঞ্জের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তাঁতী জনগোষ্ঠির বসবাস। বিলুপ্তি হওয়া তাঁত শিল্পকে পুনরুদ্ধারে সরকারী বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বেকার তাঁতীদের কর্মসংস্থানকে তরান্বিত করা হবে।বিপুল সংখ্যক হিন্দু খ্রিস্টান সমৃদ্ধ দোহার নবাবগঞ্জকে শান্তি সম্প্রীতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে শান্তি সন্নিবেশ বাস্তবায়নে স্থারীয় ভাবে কমিটি গঠনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। নবাবগঞ্জে ইছামতি নদীর নবাবগঞ্জ-যন্ত্রাইল ব্রীজ প্রশস্তকরণ, কৈলাইলের শালিকা লঞ্চঘাটে প্রস্তাবিত ব্রীজ নির্মাণে জরুরী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া শোল্লার কালিগঙ্গা নদীর উপর পাতিলঝাপ দত্তখন্ড প্রস্তাবিত ব্রীজের বাস্তবায়নে জনগুরুত্ব বলে বিবেচিত হবে।
এদিকে আগামী ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দোহার ও নবাবগঞ্জ(ঢাকা-১) আসনে মোট ৭ প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ছাড়া অন্যদের প্রচার প্রচারণার মাঠে তেমন দেখা যায় না বলে জানায় যন্ত্রাইল গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধু পাপিয়া আক্তার বলেন, আমাদের কাছে নৌকা ও লাঙ্গলের কর্মী ছাড়া অন্য কোন দলের লোক আসে নি ভোট চাইতে।
অপরদিকে বাহ্রা ইউনিয়নের বাসিন্দা নারী নেত্রী রিমা আক্তার একুশের কন্ঠকে বলেন, দোহার নবাবগঞ্জবাসী উন্নয়নে বিশ্বাসী তারা উন্নয়ন ধওে রাখতে অবশ্যই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে অবশ্যই সালমান ভাইকে বিজয়ী করবে।
অপরদিকে বাগমারা বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম বলেন, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম নবাবগঞ্জের গৃহবধু তার স্বামী নুরুল ইসলাম আমাদের কাছের বড় ভাই ছিলেন আমরা তাকে ভোট দিব। দেখা যাক ৭ জানুয়ারীকে বিজয়ী হোন এ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এমন কথা বলেন নবাবগঞ্জে সমসাবাদ এলাকার গোলাম হোসেন।